
কেরানীগঞ্জের একটি বাড়ির ছাদে স্টারলিংকের অ্যানটেনাছবি: সংগৃহীত
জাহিদ হোসাইন খান
প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১: ০০
গত ২০ মে বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়েছে স্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবা। তবে গত ৯ এপ্রিল থেকেই দেশে পরীক্ষামূলকভাবে স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা পরিচালনা করেছে স্টারলিংক। সে হিসেবে আজ শনিবার বাংলাদেশে স্টারলিংক ইন্টারনেট সেবা চালুর ১৫০তম দিন। দ্রুতগতির স্যাটেলাইটনির্ভর ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ থাকায় বাংলাদেশে শুরু থেকেই স্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবা নিয়ে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বেশ আগ্রহ দেখা গেছে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ স্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবা ব্যবহার করছেন। স্টারলিংকের ইন্টারনেট ব্যবহারের অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন ব্যবহারকারী।
আইএসপির চেয়ে ভালো সেবা
স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা চালুর মাধ্যমে স্টারলিংক দেশের ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি) ও মোবাইল ফোননির্ভর ইন্টারনেট সেবাকে চ্যালেঞ্জ করেছে। এ বিষয়ে ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জে থাকা প্রযুক্তি উদ্যোক্তা সোহাগ হাসান বলেন, ‘আমি ফ্রিল্যান্সিংসহ বিভিন্ন কাজে স্টারলিংকের ইন্টারনেট ব্যবহার করছি। আমার এলাকায় অন্যান্য আইএসপির তুলনায় স্টারলিংক কয়েক গুণ ভালো সেবা দিচ্ছে। তুমুল বৃষ্টি বা ঝড় ছাড়া ইন্টারনেটের গতি কমে যায় না স্টারলিংকের। আমাদের মতো ফ্রিল্যান্সাররা স্টারলিংকের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারছেন। তবে শুরুর দিকে অনেকেই হুজুগে স্টারলিংকের সংযোগ নিলেও এখন তা বিক্রি করে দিচ্ছেন। আসলে সাধারণ ব্যবহারকারীদের ইউটিউব বা ফেসবুক চালানোর জন্য যে গতির ইন্টারনেট প্রয়োজন, তার চেয়ে অনেক বেশি গতির ইন্টারনেট পাওয়া যায় স্টারলিংকে। তবে সংযোগ ও ইন্টারনেটের দাম অনেক বেশি বলা যায়। হয়তো ভবিষ্যতে গ্রাহক বাড়লে দাম কমাতে পারে স্টারলিংক।’ নারায়ণগঞ্জের ফ্রিল্যান্সার হামিম হোসেন স্টারলিংকের শুরুর দিকের গ্রাহক। তিনি বলেন, ‘লোকাল ব্রডব্যান্ড বাদ দিয়ে আমি খুব আগ্রহ নিয়ে স্টারলিংক ব্যবহার করছি। আমি ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ করি, স্টারলিংকের মাধ্যমে আমার বেশ কাজে গতি এসেছে। আমার বাসায় ৬ থেকে ৮টি যন্ত্রে স্টারলিংক ইন্টারনেট ব্যবহার করছি। আমি শুরুর দিকে ৬ হাজার টাকার প্যাকেজ নিলেও এখন ৪২০০ টাকার প্যাকেজ ব্যবহার করছি।’
বাংলাদেশ ওপেন ইউনিভার্সিটির কম্পিউটারবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মামুনুর রশীদ বলেন, স্টারলিংক স্যাটেলাইটনির্ভর উচ্চগতি ও সহজে স্থাপনযোগ্য সংযোগব্যবস্থা, যা বিশ্বব্যাপী, বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট সংযোগের নতুন দিকের সূচনা করেছে। অনেক শিক্ষার্থী ও তরুণ উদ্যোক্তা এটি ব্যবহার করে পড়াশোনার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং, ই-কমার্স ও অন্যান্য প্রযুক্তিনির্ভর কাজে যুক্ত হচ্ছেন। স্টারলিংক ভবিষ্যতে স্বাস্থ্যসেবা, ই-শিক্ষা ও ই-কমার্সে বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।’
নতুন গ্রাহক টানছে স্টারলিংক, টিনের ছাদে অ্যানটেনা
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রচলিত ব্রডব্যান্ডের ইন্টারনেট সংযোগের সমস্যার কারণে স্টারলিংক ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন অনেকেই। অনলাইনে আধেয় (কনটেন্ট) নির্মাতা সৈয়দ আবিদ হুসাইন সম্প্রতি স্টারলিংকের সংযোগ নেওয়ার জন্য অর্ডার করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি সাধারণ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে কয়েক বছর ধরে কাজ করেছি। ইন্টারনেট সেবায় অনেক সমস্যা দেখি। অনেক সময় কাজের প্রয়োজনের সময় ইন্টারনেট সংযোগ পাই না। স্থানীয় অফিসে ফোন করে বিরক্ত হতে হয়। আবার কোনো ভিডিও আপলোড-ডাউনলোডের সময় অনেক সমস্যা দেখি। এসব সমস্যার কথা বিবেচনা করে স্টারলিংক সংযোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করি, ভালো ইন্টারনেট সেবা পাব।’ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গবেষণা কর্মকর্তা আহসান কবীর বলেন, ‘আমরা পার্বত্য এলাকায় অনলাইন ক্লাসরুম পরিচালনার জন্য স্টারলিংক সেবা নিয়েছি। এর ফলে অনেক শিক্ষার্থী বর্তমানে স্টারলিংক ইন্টারনেট সেবার মাধ্যমে অনলাইনে ক্লাসে অংশ নিতে পারছে।’ বান্দরবান শহরে চার থেকে পাঁচটি স্টারলিংক রিসিভার ও প্রত্যন্ত লামা এলাকাতে স্টারলিংক ব্যবহার করতে দেখেছি। স্থানীয় অনেক তরুণ উদ্যোক্তা তাঁদের প্রয়োজনে স্টারলিংক ব্যবহার করছেন। বেশ কয়েকটি ফ্রিল্যান্সার প্রতিষ্ঠান তাদের কাজের সুবিধার জন্য নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। প্রথম দিকে সংযোগ পেতে পেমেন্ট গেটওয়ে–সংক্রান্ত কিছুটা সমস্যা ছিল। এখন বাংলাদেশের যেকোনো কার্ড দিয়ে পেমেন্ট করা যায় বলে অনেকেই স্টারলিংকের প্রতি আগ্রহী হচ্ছে। কক্সবাজারের প্রত্যন্ত এলাকা যেমন উখিয়াতে বেশ কয়েকটি স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা তাদের কাজের জন্য স্টারলিংক ব্যবহার করছে। সেখানে ছয়-সাতটি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম স্টারলিংকের মাধ্যমে পরিচালনা করা হচ্ছে। ২০ আগস্ট রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলায় হাসান শাহরিয়ার স্টারলিংক মিনি স্থাপন করেছেন টিনের ছাদের ওপর।