রয়টার্স ও দ্য গার্ডিয়ান।

ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেতা মারিয়া কোরিনা মাচাদোফাইল ছবি: রয়টার্স।
ভেনেজুয়েলার বিরোধীদলীয় নেতা মারিয়া কোরিনা মাচাদো আজ শুক্রবার শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। নরওয়ের নোবেল কমিটির মতে, ভেনেজুয়েলায় গণতান্ত্রিক অধিকার সমুন্নত রাখা এবং দেশটির গণতান্ত্রিক লড়াইয়ে অবদান রাখার জন্য তাঁকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
নোবেল পুরস্কার পাওয়ার খবরে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ৫৮ বছর বয়সী মাচাদো বলেন, “ওহ ঈশ্বর…আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। …এটি একটি আন্দোলন, এটি পুরো সমাজের অর্জন। আমি শুধু একজন মানুষ। আমি কোনোভাবেই এর যোগ্য নই।”
আত্মগোপনে থেকেও অটল
নোবেল কমিটির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, মাচাদো গত এক বছর ধরে আত্মগোপনে আছেন। তাঁর জীবন গুরুতর হুমকির মুখে থাকা সত্ত্বেও তিনি ভেনেজুয়েলায় নিজ দেশেই আছেন, যা লাখ লাখ মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে।
- তিনি দেশের বিরোধী দলগুলোর মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করেছেন।
- ভেনেজুয়েলায় সামরিকীকরণের বিরুদ্ধে তিনি সব সময় সোচ্চার ছিলেন এবং শান্তিপূর্ণভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অটল।
উচ্চবিত্ত পরিবারে জন্ম ও রাজনৈতিক জীবন
মারিয়া কোরিনা মাচাদো ১৯৬৭ সালের ৭ অক্টোবর ভেনেজুয়েলার রাজধানী কারাকাসে এক উচ্চবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ছিলেন দেশের ইস্পাতশিল্পের একজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী।
- শিক্ষাজীবন: কারাকাসের আন্দ্রেস বেলো ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রকৌশলে স্নাতক ডিগ্রি এবং আইইএসএ থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
- সমাজসেবা: ১৯৯২ সালে তিনি অ্যাথেনিয়া ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন, যা কারাকাসের পথশিশুদের কল্যাণে কাজ করে।
- রাজনীতিতে প্রবেশ: রাজনীতিতে প্রবেশের আগে তিনি ভোট পর্যবেক্ষণ সংস্থা ‘সুমাতে’ প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১০ সালে তিনি বিরোধীদলীয় জোট থেকে ভেনেজুয়েলার জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
- রাজনৈতিক দল: ২০১২ সালে তিনি ‘ভেন্তে ভেনেজুয়েলা’ নামের রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন।

ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেতা মারিয়া কোরিনা মাচাদো। রাজধানী কারাকাসে প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোর তৃতীয় মেয়াদের শপথের আগে এক বিক্ষোভে, ৯ জানুয়ারি ২০২৫
ছবি: রয়টার্স।
মাচাদো ভেনেজুয়েলায় উদার অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রবক্তা। তিনি রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি ‘পিডিভিএসএ’-সহ অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠান বেসরকারীকরণে পক্ষপাতী।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও নিপীড়ন
২০১৪ সালে তিনি নিকোলা মাদুরোর সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেন এবং রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার হন।
২০২৩ সালে তিনি বিরোধী দলের প্রার্থী হিসেবে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য মনোনীত হলেও তাঁকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। পরে তিনি তাঁর সহযোগী অ্যাডমান্ডো গঞ্জালেসকে সমর্থন দেন।
২০২৪ সালের জুলাইয়ের বিতর্কিত নির্বাচনের পর প্রেসিডেন্ট মাদুরো কঠোর হাতে বিক্ষোভ দমন শুরু করলে গঞ্জালেস দেশ ছাড়লেও, মাচাদো ঝুঁকি নিয়ে এখনো দেশে আত্মগোপনে রয়েছেন।
মাচাদো তিন সন্তানের জননী এবং বর্তমানে তাঁর সন্তানেরা বিদেশে বসবাস করেন। তিনি চেক প্রজাতন্ত্র থেকে দেওয়া ‘ভাচলাভ হাভেল হিউম্যান রাইটস প্রাইজ’ এবং ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ‘সাখারভ প্রাইজ’-সহ একাধিক আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন।