
বাণিজ্য ডেস্ক
প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০২৫, ২২: ৫৯
দেশে পরিবেশ সংরক্ষণ, পরিবেশ শিক্ষা ও পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধিতে অবদান রাখায় চার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ‘দ্বিজেন শর্মা পরিবেশ পদক ২০২৪’ শীর্ষক সম্মাননা দিয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক। এবার সম্মাননা পেয়েছেন নটর ডেম কলেজের সাবেক শিক্ষক মিজানুর রহমান ভূঁইয়া, সুচিশিল্পী ও উদ্যানপ্রেমী মো. আমিনুল ইসলাম, সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা এবং চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের মস্তাননগরের ‘প্রজেক্ট সোনাপাহাড়’ শীর্ষক প্রকল্প। এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছে পরিবেশবাদী সংগঠন ‘তরুপল্লব’।
আজ শনিবার ঢাকায় বাংলা একাডেমিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই সম্মাননা জানানো হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহার।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ব্র্যাক ব্যাংক এই তথ্য জানিয়েছে। এতে বলা হয়, খ্যাতনামা প্রকৃতিবিদ ও উদ্ভিদবিজ্ঞানী অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মার স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে এই পদক চালু করা হয়েছে। তাঁর জীবন ও কাজ অসংখ্য মানুষকে প্রকৃতি রক্ষায় অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নটর ডেম কলেজের সাবেক শিক্ষক মিজানুর রহমান ভূঁইয়া জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও পরিবেশ শিক্ষায় চার দশকের বেশি সময় ধরে কাজ করার জন্য এই সম্মাননা পান। পরিবেশ রক্ষায় তিনি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি পরিবেশবিষয়ক পত্রিকা প্রকাশ করেছেন। তিনি হাজারো শিক্ষার্থীকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, যাঁরা বর্তমানে পরিবেশ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
সুচিশিল্পী ও উদ্যানপ্রেমী মো. আমিনুল ইসলাম ১৫ বিঘা জমিজুড়ে ‘গাছবাড়ি’ উদ্যান গড়ে তোলার জন্য ‘বৃক্ষসখা’ সম্মাননা পেয়েছেন। তাঁর গড়ে তোলা উদ্যানে প্রায় ১০ হাজার গাছপালার পাশাপাশি ২৫০ প্রজাতির দুর্লভ ও অনন্য গঠনের গাছ রয়েছে। তিনি শিক্ষার সঙ্গে বাগানবিদ্যা ও বন্য প্রাণী পরিচর্যার সমন্বয় ঘটিয়েছেন।
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের মস্তাননগরে অবস্থিত ‘প্রজেক্ট সোনাপাহাড়’ দেশের প্রথম বেসরকারি ‘মিয়াওয়াকি’ বন গড়ে তোলার জন্য সম্মাননা পায়। জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও অপরিকল্পিত নগরায়ণের প্রভাব মোকাবিলায় এই বন অনন্য ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
এ ছাড়া রাঙামাটিতে কমিউনিটিভিত্তিক পরিবেশ সংরক্ষণে কাজ করার জন্য পদক জিতেছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা। তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে ৮৭ হাজার ৫০০টির বেশি পাখিবান্ধব চারা বিতরণের পাশাপাশি সড়কের পাশে হাজারো বৃক্ষ রোপণ করেছেন। সওজ লেক ভিউ গার্ডেনসহ বিভিন্ন পরিবেশবান্ধব পর্যটন উদ্যোগও তাঁরই নেওয়া।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘সম্মাননাপ্রাপ্ত প্রত্যেক ব্যক্তি তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন। তাঁদের কাজ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় বন, নদী, বন্য প্রাণী তথা পরিবেশ রক্ষা কারও একক দায়িত্ব নয়, বরং এই পৃথিবীতে টিকে থাকার লড়াইয়ে এটি আমাদের সবারই দায়িত্ব।’
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহার বলেন, ‘এই পরিবেশ হিরোরা দেখিয়েছেন যে টেকসই উন্নয়নের শুরু আসলে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ব্যক্তির হাত ধরেই। তাঁদের কর্মকাণ্ড এমন এক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখাচ্ছে যেখানে উন্নয়ন আর প্রকৃতি থাকবে পাশাপাশি।’
ব্র্যাক ব্যাংকের ভাইস চেয়ারপারসন ফারুক মঈনউদ্দীন বলেন, ‘এসব পরিবেশ সচেতন ব্যক্তি বাংলাদেশকে ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। দ্বিজেন শর্মা পরিবেশ পদক তাঁদের নিরলস কাজের এক অসামান্য স্বীকৃতি। এটি সমাজে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে অনুপ্রেরণা জোগাবে বলে আমার বিশ্বাস।’
তরুপল্লবের সাধারণ সম্পাদক মোকারম হোসেন বলেন, ‘প্রকৃতি সংরক্ষণের প্রচেষ্টায় আমাদের আরও সহযোগিতা দরকার। একসঙ্গে কাজ করতে পারলে আমরা কার্যক্রম আরও বিস্তৃত করতে পারব, যা আরও অনেক মানুষকে এই গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগে যুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করবে।’
ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও (চলতি দায়িত্বে) তারেক রেফাত উল্লাহ খান বলেন, ‘ব্র্যাক ব্যাংক সব সময় বিশ্বাস করে, প্রকৃত উন্নয়ন পরিবেশের উন্নয়নের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত। এই পদক তাঁদের জন্য যাঁরা প্রকৃতি রক্ষায় জীবন উৎসর্গ করেছেন।’