
কেইপিজেডে ইয়াংওয়ান করপোরেশনের কারখানায় কাজ করছেন শ্রমিকেরা। গত এপ্রিলে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় কেইপিজেডে।ছবি
নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রাম ও ঢাকা
বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানিতে শীর্ষ অবস্থানটি দক্ষিণ কোরীয় ব্যবসায়ী কিহাক সাংয়ের মালিকানাধীন ইয়াংওয়ান করপোরেশনের। এই তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে দেশীয় ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদের মালিকানাধীন হা-মীম গ্রুপ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ২০২৪-২৫ অর্থবছরের রপ্তানি পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এনবিআর-এর তথ্যমতে, গত অর্থবছর দেশ থেকে মোট ৪৬.৫৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে শীর্ষ দশ গ্রুপের সম্মিলিত রপ্তানির পরিমাণ ৫.২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা মোট রপ্তানির ১১ শতাংশ।
শীর্ষ দশে থাকা নয়টি শিল্প গ্রুপের রপ্তানির প্রায় পুরোটাই (৯০-১০০%) তৈরি পোশাক। এই তালিকায় ব্যতিক্রম শুধু প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ, যাদের রপ্তানিতে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যসহ জুতা, আসবাব, প্লাস্টিক ও হালকা প্রকৌশল পণ্য রয়েছে।
শীর্ষ ১০ রপ্তানিকারক শিল্পগোষ্ঠী (২০২৪-২৫ অর্থবছর)
| ক্রম | শিল্পগোষ্ঠীর নাম | রপ্তানি (কোটি ডলারে) |
| ১ | ইয়াংওয়ান করপোরেশন | ৯৭ |
| ২ | হা-মীম গ্রুপ | ৬৫ |
| ৩ | মণ্ডল গ্রুপ | ৫৬ |
| ৪ | ডিবিএল গ্রুপ | ৫২ |
| ৫ | অনন্ত গ্রুপ | ৪৬ |
| ৬ | প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ | ৪৪ |
| ৭ | স্কয়ার গ্রুপ | ৪৩ |
| ৮ | পলমল গ্রুপ | ৪১ |
| ৯ | প্যাসিফিক গ্রুপ | ৪১ |
| ১০ | মাইক্রো ফাইবার গ্রুপ | ৩৯ |
| ১০ শিল্পগোষ্ঠীর মোট রপ্তানি | ৫২৫ | |
| মোট রপ্তানি | ৪, ৬৫৭ |
বিলিয়ন ডলার ছুঁই ছুঁই ইয়াংওয়ান করপোরেশন
বাংলাদেশে অনেক বছর ধরে রপ্তানিতে শীর্ষস্থানে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার উদ্যোক্তা কিহাক সাংয়ের ইয়াংওয়ান করপোরেশন।
- রপ্তানির পরিমাণ: ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি ৯৭ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে (আগের বছরের চেয়ে ১১.৫% বেশি)।
- পণ্যের মূল্য: তাদের প্রতি পিস পোশাক গড়ে ২৩ ডলারে রপ্তানি হয়েছে, যা শীর্ষ কোম্পানিগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। সবচেয়ে দামি জ্যাকেটের প্রতিটির রপ্তানি মূল্য ছিল ৪৪৮ ডলার।
- ক্রেতা: অ্যাডিডাস, রাল্ফ লরেন, লুলুলেমন, ম্যামুথ স্পোর্টসের মতো বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড ইয়াংওয়ানের ওপর আস্থা রাখে।
চেয়ারম্যান কিহাক সাং বলেন, তৈরি পোশাক রপ্তানিতে তাঁরা ১০-১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখছেন। তিনি লিড টাইম কমাতে বন্দরের কার্যক্রম, শুল্কপ্রক্রিয়া ও অবকাঠামো খাতের উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দেন।

কেইপিজেডে ইয়াংওয়ান করপোরেশনের কারখানায় কাজ করছেন শ্রমিকেরা। গত এপ্রিলে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় কেইপিজেডে।ছবি
দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শীর্ষে হা-মীম গ্রুপ
দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানিকারক হা-মীম গ্রুপের রপ্তানির প্রায় পুরোটাই তৈরি পোশাক।
- রপ্তানির পরিমাণ: গত অর্থবছরে গ্রুপটি ৬৫ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে (আগের বছরের চেয়ে ১১% বেশি)।
- বাজার: রপ্তানির ৭১ শতাংশ বা ৪৬ কোটি ৪৬ লাখ ডলারের গন্তব্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র।
- ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ বলেন, তাঁরা রপ্তানি বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। পোশাকের দাম কমে গেলেও তাঁরা উৎপাদন ও পরিমাণের দিক থেকে বেশি রপ্তানির চেষ্টা করছেন।
অর্ধবিলিয়ন ডলার ছাড়ানো অন্যান্য গ্রুপ
| গ্রুপ | অবস্থান | রপ্তানির পরিমাণ (২০২৪-২৫) | বিশেষ তথ্য |
| মণ্ডল গ্রুপ | ৩য় | ৫৬ কোটি ডলার | উৎপাদিত পোশাকের বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে যায়। |
| ডিবিএল গ্রুপ | ৪র্থ | ৫২ কোটি ডলার | রপ্তানি ১২% বেশি; পোশাক ছাড়াও ওষুধ ও সিরামিকস খাতে যুক্ত। |
| অনন্ত গ্রুপ | ৫ম | ৪৬ কোটি ২১ লাখ ডলার | রপ্তানির পুরোটাই তৈরি পোশাক; নরসিংদীতে সিনথেটিক কাপড়ের কারখানা স্থাপন করছে। |
ডিবিএল গ্রুপ: ভাইস চেয়ারম্যান এম এ রহিম জানান, তাঁরা ময়মনসিংহে কারখানা অধিগ্রহণ করেছেন এবং পশ্চাৎ-সংযোগশিল্পেও বিনিয়োগ করছেন।
অনন্ত গ্রুপ: এমডি শরীফ জহীর বলেন, মার্কিন ক্রেতাদের কেউ কেউ পাল্টা শুল্কের একটি অংশ দাবি করছেন। নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে হচ্ছে।

নরসিংদীর ডাঙ্গা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে আরএফএল ফুটওয়্যার কারখানায় কাজ করছেন শ্রমিকেরা। এই জুতা রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে
ছবি: আরএফএলের সৌজন্যে
অন্যান্য শীর্ষ গ্রুপের অবস্থান
| গ্রুপ | অবস্থান | রপ্তানির পরিমাণ (২০২৪-২৫) | বিশেষ তথ্য |
| প্রাণ-আরএফএল | ৬ষ্ঠ | ৪৪ কোটি ৮৭ লাখ ডলার | তৈরি পোশাকের বাইরে একমাত্র গ্রুপ; কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যসহ দেড় হাজার রকমের পণ্য রপ্তানি করে। |
| স্কয়ার গ্রুপ | ৭ম | ৪৩ কোটি ১৫ লাখ ডলার | রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে সবচেয়ে এগিয়ে (২০% বেশি); ওষুধ, প্রসাধন ও খাদ্যপণ্য রপ্তানি করে। |
| পলমল গ্রুপ | ৮ম | ৪০ কোটি ৭৬ লাখ ডলার | টানা দুই বছর কমার পর ৮% প্রবৃদ্ধি নিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে; শতভাগ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক। |
| প্যাসিফিক জিনস | ৯ম | ৪০ কোটি ৬১ লাখ ডলার | জিনস রপ্তানিতে পথপ্রদর্শক; বড় ক্রেতা জাপানের ইউনিক্লো। |
| মাইক্রো ফাইবার | ১০ম | ৩৯ কোটি ৩৯ লাখ ডলার | রপ্তানির ৯৮% ইইউতে; রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে নতুন বিনিয়োগে ‘ধীরে চলো’ নীতিতে। |
পিছিয়ে পড়া শিল্প গ্রুপ
- বেক্সিমকো গ্রুপ: গত অর্থবছরে রপ্তানি ৭৯ শতাংশ কমে ৯ কোটি ৯৪ লাখ ডলারে নেমে যাওয়ায় শীর্ষ দশের তালিকা থেকে ছিটকে গেছে। সরকার পতনের পর তাদের কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যায়।
- স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপ: গত অর্থবছরে রপ্তানি ৩.৫ শতাংশ কমে যাওয়ায় এই গ্রুপটিও শীর্ষ দশ থেকে বেরিয়ে গেছে।
বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, ছোট-বড় সব ব্যবসায়ীর জন্যই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্থিতিশীলতা থাকলেই ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবেন এবং একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন প্রয়োজন।
