সানাউল্লাহ সাকিব, ঢাকা।

ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি।
বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি-তে একদিকে চলছে কর্মকর্তাদের ছাঁটাই, অন্যদিকে শুরু হয়েছে নতুন করে নিয়োগের তোড়জোড়। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে ‘অবৈধ প্রক্রিয়া’য় নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের ছাঁটাই করা শুরু করেছে ব্যাংকটি। এই পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে ব্যাংকটিতে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
ব্যাপক ছাঁটাই ও ওএসডি
ব্যাংকটি ইতিমধ্যেই দুই শতাধিক কর্মকর্তাকে সরাসরি বরখাস্ত করেছে, যার মধ্যে ব্যাংকের আয়োজনে পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তারাও রয়েছেন। অনেকে চাকরি ছেড়ে পালিয়েছেন।
- মূল্যায়ন পরীক্ষা: নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও পরীক্ষা ছাড়া চাকরি পাওয়াদের মধ্য থেকে ৫ হাজার ৩৮৫ জনের যোগ্যতা মূল্যায়ন পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছিল ব্যাংকটি।
- ওএসডি: গত শনিবার অনুষ্ঠিত মূল্যায়ন পরীক্ষায় ৪ হাজার ৯৫৩ জন অংশ নেননি। এই কর্মকর্তাদের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা ওএসডি করেছে ব্যাংক।
- বরখাস্ত: এছাড়া চাকরিবিধি লঙ্ঘনের দায়ে ২০০ জনকে ছাঁটাই করা হয়েছে। এরপর চট্টগ্রামের পটিয়ায় একদল কর্মী বিক্ষোভ করেন।
সংকটের মূল কারণ: এস আলম গ্রুপের দখল
২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংক দখল করে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এস আলম গ্রুপ। এরপর ব্যাংকটি থেকে গত বছরের ৫ আগস্টের আগপর্যন্ত প্রায় এক লাখ কোটি টাকা বের করে নেন এস আলম গ্রুপ ও আওয়ামী লীগ–সমর্থিত ব্যবসায়ীরা। এসব টাকা ফেরত না আসায় ব্যাংকটি বড় ধরনের সংকটে পড়েছে।
- খেলাপি ঋণ: বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ৬৫ হাজার ৭১৬ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৪২ দশমিক ২২ শতাংশ।
- অবৈধ নিয়োগ: এই সময়ে ব্যাংকটিতে কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও পরীক্ষা ছাড়াই প্রায় ১০ হাজার কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়, যা এখন ব্যাংকটির জন্য বড় সমস্যা তৈরি করেছে।
’বক্স বসিয়ে’ নিয়োগ প্রক্রিয়া
বিভিন্ন সূত্র জানায়, এই সময়ে সাইফুল আলম বা এস আলমের গ্রামের বাড়ি পটিয়া ও চট্টগ্রামের অফিসে চাকরি দেওয়ার জন্য বক্স বসানো হতো। পটিয়া, আনোয়ারা, বাঁশখালী উপজেলাভিত্তিক আলাদা বক্সে জীবনবৃত্তান্ত জমা পড়লেই তখন ইসলামী ব্যাংকে চাকরি দেওয়া হতো। এমনকি আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা ও মন্ত্রীদের পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থেকেও কোনো জীবনবৃত্তান্ত পাঠালেও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এস আলমের দখলের আগে ২০১৬ সাল শেষে ব্যাংকটির জনবল ছিল ১৩ হাজার ৫৬৯ জন। বর্তমানে ব্যাংকটিতে প্রায় ২২ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ১১ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী চট্টগ্রাম বিভাগের, যার মধ্যে পটিয়ার বাসিন্দাই ৪ হাজার ৫২৪ জন।
নতুন নিয়োগের ঘোষণা
ছাঁটাইয়ের পাশাপাশি ব্যাংকটি গতকাল মঙ্গলবার নতুন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। ট্রেইনি অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার (ক্যাশ) পদের জন্য স্নাতক উত্তীর্ণ এবং ট্রেইনি অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার পদের জন্য স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণরা আবেদন করতে পারবেন।
ইসলামী ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামাল উদ্দীন জসীম প্রথম আলোকে বলেন, “নীতিমালা না মেনে যাঁরা নিয়োগ পেয়েছিলেন, সবার যোগ্যতা যাচাই হবে। ব্যাংকের সেবার মান ধরে রাখতে যোগ্য কর্মকর্তা থাকা জরুরি। এ জন্য আমরা নতুন জনবল নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। যথাযথ মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দ্রুত সময়ে এসব নিয়োগ দেওয়া হবে।”
ব্যাংকের ঢাকার দুটি শাখার ব্যবস্থাপকেরা মনে করেন, অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়াদের মধ্যে যোগ্য কর্মকর্তারাও আছেন, যাঁরা ছয়-সাত বছর ধরে কাজ করে অবদান রাখছেন। হঠাৎ করে সবাইকে বাদ দিলে ভবিষ্যতে ব্যাংক বড় ধরনের আর্থিক লোকসানের মধ্যে পড়তে পারে।