
বহুতল ভবন সুসি টাওয়ারের ধ্বংসস্তূপের পাশে বসে আছেন অসহায় এক ফিলিস্তিনি। আজ গাজা নগরীতেছবি: এএফপি
এএফপি
জেরুজালেম
প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২২: ১০
ফিলিস্তিনের গাজা নগরী ছেড়ে বাসিন্দাদের চলে যেতে বলেছে ইসরায়েল। তাঁদের উপত্যকার দক্ষিণ দিকে আশ্রয় নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশনার পরপরই হামলা চালিয়ে গাজা নগরীর আরেকটি বহুতল ভবন গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। ওই ভবনটিতে বেশ কয়েকটি বেসামরিক ফিলিস্তিনি পরিবার আশ্রয় নিয়েছিল বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।
গাজা উপত্যকার সবচেয়ে বড় শহর এলাকা এই গাজা নগরী। এই এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে গত মাস থেকে ব্যাপক অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। আকাশপথে হামলার পরিমাণ বাড়িয়েছে তারা। নগরীর উপকণ্ঠে চালানো হচ্ছে স্থল অভিযান। এতে সেখানে আগে থেকে সংকটে থাকা ফিলিস্তিনিদের অবস্থা আরও শোচনীয় হয়েছে। কত দিন এ অভিযান চলবে, তা–ও জানায়নি ইসরায়েল।
গাজা নগরীর বহুতল আবাসিক ভবনটিতে ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালায় আজ শনিবার। তাদের দাবি, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জন্য ওই ভবনে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি স্থাপন করেছিল হামাস। এ ছাড়া সেখান থেকে ইসরায়েলি সেনাদের ওপর পর্যবেক্ষণ করা হতো। তাই ভবনটি ধ্বংস করেছে তারা। তবে এ ক্ষেত্রে ‘বেসামরিক মানুষের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে’ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।
১৫ তলা ওই ভবনের নাম সুসি রেসিডেনশিয়াল টাওয়ার বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। তাঁদের চোখের সামনেই ভবনটি ধ্বংস হয়েছে। এ ছাড়া ভবন ধ্বংসের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করেছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। আগের দিনও গাজা নগরীর একটি বহুতল ভবনে ইসরায়েলের হামলার ভিডিও প্রকাশ করেছিলেন তিনি।
ভিডিও প্রকাশ করে কাৎজ বলেছেন, এমন হামলা চলতে থাকবে। একই হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। হামাসের ব্যবহৃত বিভিন্ন স্থাপনা—বিশেষ করে বহুতল ভবনগুলো লক্ষ্য করে আগামী দিনগুলোতে হামলা চালানো হবে বলে জানিয়েছে তারা। গতকালই তারা আরেকটি বহুতল ভবন থেকে বাসিন্দাদের সরে যেতে বলেছে। একই সঙ্গে গাজা নগরীর বাসিন্দাদের সরে যেতে বলা হয়েছে।
গাজা নগরীর বাসিন্দাদের উদ্দেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র অ্যাভিচে আদ্রাই তাঁদের ‘নিরাপদ’ আল–মাওয়াসি এলাকায় সরে যেতে বলেন। এই এলাকার অবস্থান উপত্যকার দক্ষিণে খান ইউনিসে। সেখানে গেলে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনিদের খাবার, তাঁবু, ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করা হবে বলে জানান তিনি।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় নৃশংস হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। হামলার শুরুর দিকেই আল–মাওয়াসিকে ‘নিরাপদ’ এলাকা বলে ঘোষণা দিয়েছিল তারা। এরপরও সেখানে বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের মধ্যে হামাস যোদ্ধারা লুকিয়ে আছেন—এমন অভিযোগ তুলে বারবার হামলা চালানো হয়েছে। তাই সেখানে নিয়ে আদৌ নিরাপত্তা মিলবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে ফিলিস্তিনিদের।
এমনই একজন আবদেল নাসের মুসতাহা। ৪৮ বছর বয়সী এই ফিলিস্তিনি গাজা নগরীর জেইতুন এলাকার বাসিন্দা। এখন নগরীর রিমাল এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কেউ বলছেন পালিয়ে যাওয়া উচিত। কেউ বলছেন, না। কারণ, গাজার সব জায়গায় বোমাবর্ষণ হচ্ছে। দেড় বছর ধরে কথিত আল–মাওয়াসি মানবিক এলাকায় বোমাবর্ষণ করে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে।’
যেমন আজই গাজায় ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৩৫ জন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে ২৩ মাস ধরে চলা হামলায় উপত্যকাটিতে নিহত হয়েছেন ৬৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছেন ১ লাখ ৬২ হাজারের বেশি। বেশির ভাগই নারী ও শিশু। এমন পরিস্থিতিতে ইসরায়েল যদি গাজা নগরী দখলের অভিযান এগিয়ে নেয়, তাহলে ‘বিপর্যয়কর’ পরিস্থিতি দেখা দেবে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ।
গত মাসে গাজা নগরীতে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করেছিল জাতিসংঘ–সমর্থিত প্রতিষ্ঠান আইপিসি। জাতিসংঘের হিসাবে, বর্তমানে এই এলাকা এবং আশপাশে প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনি রয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগই হামলার মুখে প্রাণ বাঁচাতে একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। নগরীর বাসিন্দা নাসের মুসতাহার ২০ বছর বয়সী মেয়ে সামিয়া মুসতাহা বলেন, ‘আমরা কোথায় যাব? বোমা অথবা অনাহার—মৃত্যু তো আমাদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।’