
রংপুরে অ্যানথ্রাক্স সংক্রমণের মধ্যে গবাদিপশু নিয়ে উদ্বিগ্ন খামারিরা। বৃহস্পতিবার সদর উপজেলার জানকি ধাপেরহাট এলাকায়ছবি: মঈনুল ইসলাম।
নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর।
রংপুরে অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত গবাদিপশু থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমণ থামছে না। তিন মাস পরও জেলার মাত্র ১৭ শতাংশ গরুকে অ্যানথ্রাক্সের টিকা দেওয়া হয়েছে। এখনো টিকার বাইরে রয়েছে ৮৩ শতাংশ গরু, আর ছাগল ও ভেড়ার টিকাদান শুরুই হয়নি।
তবে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ বলছে, তারা প্রতিদিন ৮-১০ হাজার গরুকে টিকা দিচ্ছে এবং ছাগল-ভেড়ার পিপিআর ভ্যাকসিন শেষ হলে অ্যানথ্রাক্সের টিকা দেওয়া শুরু হবে।
মানুষে সংক্রমণের ঝুঁকি ও পরিস্থিতি
অ্যানথ্রাক্স অসুস্থ গবাদিপশুর শ্লেষ্মা, লালা, রক্ত বা মাংসের স্পর্শে এলে মানুষে ছড়ায়।
- সংক্রমণ: গত জুলাই থেকে রংপুরের পীরগাছা, কাউনিয়া, মিঠাপুকুর ও সবশেষ পীরগঞ্জে শতাধিক ব্যক্তি অ্যানথ্রাক্স উপসর্গে আক্রান্ত হয়েছেন।
- মৃত্যু: এর মধ্যে গত জুলাই ও সেপ্টেম্বরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে পীরগাছায় দু’জনের মৃত্যু হয়।
- আইইডিসিআর সতর্কতা: রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) জানিয়েছে, ত্বকের অ্যানথ্রাক্স একটি নিরাময়যোগ্য রোগ হলেও বিনা চিকিৎসায় প্রতি ১০০ জনে ২০ জনের মৃত্যু হয়।
পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা দ্রুত গবাদিপশুর টিকাদান কার্যক্রম শেষ করার তাগিদ দিয়ে বলেছেন, তা না হলে আক্রান্ত গরু জবাই করে মানুষ আরও সংক্রমিত হবে এবং রোগী বেশি হলে চিকিৎসা দেওয়া কঠিন হবে।
টিকাদান কার্যক্রমের ধীরগতি
জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় ১৬ লাখ গরু রয়েছে। ২৬ আগস্ট থেকে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হলেও গতকাল বুধবার পর্যন্ত ২ লাখ ৬৪ হাজার ৪০০ মাত্রার টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে।
- সংকটের কারণ: জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আবু ছাঈদ জনবলের সংকটের কথা জানিয়েছেন। তাঁর মতে, অ্যানথ্রাক্সের টিকাদান ৫০ শতাংশে চলে এলে গবাদিপশুর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বেড়ে যাবে।
- আক্রান্তের তথ্য: চার উপজেলার ৩১ জন খামারির মধ্যে ১১৩টি গবাদিপশুর মধ্যে সন্দেহভাজন অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ দেখা দেয়। এর মধ্যে ৫০টি আক্রান্ত হয়, ১৯টি গরু মারা গেছে এবং ৩০টি জবাই করা হয়েছে।
তবে খামারিরা বলছেন, প্রাণিসম্পদ বিভাগের এই হিসাব সঠিক নয়। জুলাই ও আগস্টে শুধু পীরগাছায় শতাধিক গরু-ছাগল মারা গেছে। অসুস্থ গরু জবাই বন্ধ না হওয়ায় মানুষের মধ্যে সংক্রমণ বাড়ছে।