
কেউক্রাডংয়ের চূড়ায় মোটর বাইক।
এস এম আলাউদ্দিন আল আজাদ।
বান্দরবানে পর্যটকদের জন্য ১ অক্টোবর থেকে কেউক্রাডং ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ায় মোটরসাইকেলে ভ্রমণের শখ পূরণ করতে আগ্রহী হয়েছেন অনেকে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নির্মিত প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরত্বের পাহাড়ি রাস্তাটি কৌশল ও দক্ষতার সঙ্গে মোটরসাইকেলে পাড়ি দেওয়া যায়।
সাধারণ রাস্তার চেয়ে পাহাড়ি অঞ্চলের এই সড়কটিতে বাইক চালানোর অভিজ্ঞতা পুরোপুরি ভিন্ন। উঁচু নিচু, আঁকাবাঁকা, কখনো খাঁড়া আবার কখনো ধারালো বাঁক। ২২ অক্টোবর সাতটি মোটরসাইকেলে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থেকে পাহাড়ি রাস্তায় নিরাপদে বাইক চালানোর কিছু কৌশল নিচে তুলে ধরা হলো।
ভ্রমণের প্রস্তুতি ও নিয়মকানুন
- যন্ত্রাংশ পরীক্ষা: যাত্রা শুরুর আগে মোটরসাইকেলের ব্রেক, হর্ন এবং থ্রটলসহ সব যন্ত্রাংশ ঠিক আছে কি না, তা পরীক্ষা করা জরুরি।
- নিরাপত্তা সরঞ্জাম: চালক ও আরোহীর জন্য রাইডিং গিয়ার (হেলমেট, জ্যাকেট, গ্লাভস, বুট ইত্যাদি) পরা বাঞ্ছনীয়।
- ফরম পূরণ: বান্দরবান সদর থেকে রুমা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর টুরিস্ট অ্যাসিস্ট্যান্স সেন্টারে মাথাপিছু ৫০ টাকা দিয়ে পর্যটকদের তথ্য দিয়ে ফরম পূরণ করতে হয়, যা বিভিন্ন চেকপোস্টে দেখাতে হবে।
- গাইড আবশ্যক: রুমা থেকে বগা লেক বা কেউক্রাডং যাওয়ার জন্য গাইড নেওয়া বাধ্যতামূলক। গাইডের পারিশ্রমিক সাধারণত ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। গাইডরা রাস্তায় বাইক চালানোর কৌশল ও গিয়ার ব্যবহারের নির্দেশনা দেন। রুমা থেকে কেউক্রাডংয়ের দূরত্ব প্রায় ২৮ কিলোমিটার।

কেউক্রাডংয়ের চূড়ায় লেখক।
পাহাড়ি রাস্তায় বাইক চালানোর কৌশল
খাঁড়া পাহাড়ে ওঠার সময়
পাহাড়ি রাস্তায় নিরাপদে ওঠার জন্য আত্মবিশ্বাস ও সঠিক নিয়ন্ত্রণ জরুরি। কম সিসির বাইকেও পৌঁছানো সম্ভব।
- গিয়ার পরিবর্তন: উঁচুতে ওঠার সময় আগে থেকেই বাইককে নিচের গিয়ারে (ফার্স্ট বা সেকেন্ড) নিয়ে আসতে হবে। সেকেন্ড গিয়ার দুর্বল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ফার্স্ট গিয়ারে শক্তি পরিবর্তন করতে হবে। শেষ মুহূর্তে গিয়ার পরিবর্তন করা উচিত নয়।
- থ্রটল নিয়ন্ত্রণ: হঠাৎ দ্রুত থ্রটল মোড়ানো (গতি বাড়ানো) পরিহার করতে হবে। ওঠার আগেই ফার্স্ট গিয়ারে ৪ থেকে ৫ হাজার আরপিএমে থ্রটল রেখে ধীরে ধীরে তা বাড়াতে হবে। কম গিয়ারে টর্ক বাড়িয়ে ধীরে ধীরে ওঠাই বুদ্ধিমানের কাজ।
- অন্যান্য সতর্কতা: সামনের মোটরসাইকেল থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
নিচে নামার ক্ষেত্রে সতর্কতা
পাহাড় থেকে নিচে নামার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মনোযোগ ও দক্ষতা দরকার।
- ইঞ্জিন ব্রেক: নিচে নামার পথ দীর্ঘ হলে ব্রেকের পাশাপাশি ইঞ্জিন ব্রেক (ক্লাচ না চেপে ফার্স্ট বা সেকেন্ড গিয়ারে রেখে গতি না বাড়িয়ে বাইক চালানো) ব্যবহার করতে হবে।
- ব্রেক ব্যবহার: ব্রেক একবারে না চেপে ধীরে ধীরে ব্রেকের লিভারে চাপ প্রয়োগ করতে হবে। সামনে ও পেছনের ব্রেক একসঙ্গে ব্যবহার করলে চাকা ঘুরে যাওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
- আরোহীর করণীয়: আরোহীকে চালকের শরীরের ভাষাকে অনুকরণ করতে হবে। নামার সময় দুই পাশের পাদানিতে পায়ের পাতাগুলো শক্ত করে চেপে ধরতে হবে, এতে চালকের ওপর অতিরিক্ত চাপ কম পড়ে।
- পোশাক: আরাম ও নিরাপত্তার জন্য জিনস বা গাভার্ডিন ধরনের প্যান্ট পরা ভালো।
তীব্র বাঁক পাড়ি দেওয়ার সময়
- গতি ও হর্ন: গতি ঠিক রেখে প্রতি মোড়ে মোড়ে হর্ন বাজিয়ে রাস্তা অতিক্রম করতে হবে। বাঁকের আগে গতি কমাতে হবে।
- ওভারটেকিং পরিহার: মোড়ে ওভারটেকিং মনোভাব সম্পূর্ণভাবে বাদ দিতে হবে। প্রয়োজনে অন্য গাড়ি অতিক্রম করে দ্রুত নিজের পাশে ফিরে আসা জরুরি।
- মানসিকতা: পাহাড়ি রাস্তায় গতি নয়, নিয়ন্ত্রণই বাইকারের আসল শক্তি। ধৈর্য, মনোবল ও প্রয়োজনীয় গতিতে ঠান্ডা মাথায় রাস্তা অতিক্রম করলে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব।
