
সোনা। প্রতীকী ছবি।
শুভংকর কর্মকার, ঢাকা।
বর্তমানে বাংলাদেশে সোনার ভরি দুই লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। তবে বাংলাদেশের বাজারে সোনার দর নির্ধারণের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। দুবাই ও ভারতের তুলনায় দেশে সোনার দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
দেশ/অঞ্চল | ২২ ক্যারেট সোনার দাম (ভরি) |
---|---|
দুবাই (ভ্যাট ও মজুরি ছাড়া) | ১ লাখ ৭৫ হাজার ২৫৪ টাকা |
ভারত (সোনার গয়না, ভরি) | ১ লাখ ৯৬ হাজার ৬৩ টাকা |
বাংলাদেশ (ভ্যাট ও মজুরি ছাড়া, ২২ অক্টোবর) | ২ লাখ ১৭ হাজার ৩৮২ টাকা |
তুলনায় দেখা যায়, দুবাইয়ের চেয়ে দেশে এক ভরি সোনার দাম ৪২ হাজার ১২৮ টাকা এবং ভারতের তুলনায় ২১ হাজার ৭ টাকা বেশি।
দেশে সোনার দাম বেশি হওয়ার কারণ
জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, দেশে বৈধভাবে সোনা আমদানির সুযোগ না থাকাই সোনার দাম বেশি হওয়ার প্রধান কারণ। অন্যান্য কারণগুলো হলো:
- আমদানির পদ্ধতি: বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে সোনা আমদানি হয় না বললেই চলে। বেশিরভাগ সোনা আসে বিদেশফেরত যাত্রীদের হাত ধরে ‘ব্যাগেজ রুলসে’, যেখানে ভরিপ্রতি ৫ হাজার টাকা শুল্ক দিতে হয়।
- কয়েক ধাপের মুনাফা: বাংলাদেশ পোদ্দার সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিনের মতে, বিদেশ থেকে ব্যাগেজ রুলসে যাঁরা সোনা নিয়ে আসেন, তাঁদের মুনাফা, পাইকারি ব্যবসায়ীদের মুনাফা এবং এরপর জুয়েলার্স ব্যবসায়ীদের মুনাফা—এভাবে কয়েক ধাপে দাম কিছুটা বেড়ে যায়।
- আমদানিতে অনাগ্রহ: স্বর্ণ নীতিমালা থাকা সত্ত্বেও বৈদেশিক মুদ্রার সংকট ও ভ্যাটের কারণে আমদানিকারকেরা আগ্রহ হারিয়েছেন।
সোনার দাম কীভাবে ঠিক হয়
বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে সোনার দাম নির্ধারণ করে আসছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি বা বাজুস। তবে এই দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে ভিত্তি ধরা হয় পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারকেন্দ্রিক পাইকারি বাজারের সোনার দাম, যা নির্ধারণ করে বাংলাদেশ পোদ্দার সমিতি।
- পোদ্দার সমিতির প্রক্রিয়া: পোদ্দার সমিতি প্রতিদিন বেলা তিনটার দিকে সোনার (পিওর গোল্ড) দাম নির্ধারণ করে। এ ক্ষেত্রে বাজারে ব্যাগজ রুলসে আসা সোনা, পুরোনো অলংকারের সোনার সরবরাহ এবং কলকাতায় সোনার দাম বিবেচনায় নেওয়া হয়।
- বাজুস কমিটি: বাজুস-এর ‘স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং’ পোদ্দার সমিতির নির্ধারিত পাইকারি সোনার দর বিবেচনায় নিয়ে তার সঙ্গে জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের জন্য মুনাফা যুক্ত করে অন্যান্য ক্যারেটের দাম চূড়ান্ত করে।
দাম নির্ধারণের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন
বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মনে করেন, বাংলাদেশের বাজারে সোনার দামের ওঠানামার সঙ্গে বৈশ্বিক বাজারের সম্পর্ক দুর্বল এবং মূল্য নির্ধারণের প্রক্রিয়া ত্রুটিপূর্ণ। তাঁর মতে:
- ফর্মুলা প্রকাশ না করা: জুয়েলার্স সমিতি যে ফর্মুলা মেনে দাম নির্ধারণের কথা বলে, তা তারা প্রকাশ করে না।
- স্বচ্ছতার অভাব: মজুত, বেচাকেনার পরিমাণ এবং আনুষ্ঠানিকভাবে কতটুকু সোনা আসছে—এগুলো বিবেচনায় নেওয়ার কথা বলা হলেও, তা জানা যায় না।
- পরামর্শ: তিনি মন্তব্য করেন, সোনার মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলকভাবে কাজটি করা হয় না। এ কারণে প্রতিযোগিতা কমিশন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মূল্য নির্ধারণের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পারে।