এএফপি

প্রায় ১৪০ জন বিশ্বনেতা সাধারণ পরিষদের এবারের অধিবেশনে অংশ নেবেনফাইল ছবি: এএফপি
প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১: ৩৬
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনে বিশ্বের ১৪০ জনেরও বেশি রাষ্ট্রনেতা অংশ নেবেন। এই বছরের অধিবেশনের মূল আলোচ্য বিষয় হবে ফিলিস্তিন ও গাজা উপত্যকার ভবিষ্যৎ। এবারের অধিবেশন এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন ফিলিস্তিন সংকটের পাশাপাশি ইউক্রেন, সুদান এবং জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মানবতাকে এক কঠিন প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
ফিলিস্তিন সংকট ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায়। জবাবে সেদিন থেকেই গাজা উপত্যকায় তাণ্ডব শুরু করে ইসরায়েল। দুই বছর ধরে সেখানে নির্বিচার হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে তারা। এর ফলে, গাজায় যে মানবিক বিপর্যয় চলছে, সেটিই এবারের সাধারণ অধিবেশনের আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে।
আগামী সোমবার থেকে ইসরায়েল–ফিলিস্তিন সংকটের ‘দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান’ প্রশ্নে কয়েকটি বৈঠক হবে। সৌদি আরব ও ফ্রান্স যৌথভাবে এসব বৈঠকে সভাপতিত্ব করবে। এই সমাধানের লক্ষ্য হলো উভয় পক্ষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করা। গত সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বিপুল ভোটে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে, যেখানে ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে সমর্থন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, যদিও সেখানে হামাসকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। আসন্ন বৈঠকে কয়েকটি দেশ, বিশেষ করে ফ্রান্স, আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে, ইসরায়েলের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির বিরোধিতা করছে। এ কারণেই ওয়াশিংটন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ও তাঁর কর্মকর্তাদের ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এর ফলস্বরূপ, আব্বাসকে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ার অনুমতি দিতে আজ শুক্রবার সাধারণ পরিষদে ভোটাভুটি হবে।
ট্রাম্প ও আন্তর্জাতিক সহায়তার প্রসঙ্গ
প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফেরার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বৈদেশিক সহায়তা ব্যাপকভাবে কমিয়ে দিয়েছেন। এর ফলে, বিশ্বজুড়ে মানবিক সহায়তার প্রয়োজন যখন ক্রমে বাড়ছে, তখন জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা তাঁর এই সিদ্ধান্তে বড় ধাক্কা খেয়েছে। যখন মাহমুদ আব্বাস বক্তব্য দেবেন, তখন সবার চোখ থাকবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দিকে।
নেতানিয়াহুর হুঁশিয়ারি ও জাতিসংঘের সক্ষমতা
অলাভজনক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বিশ্লেষক রিচার্ড গোয়ান এই পদক্ষেপকে ‘প্রতীকী’ বলে উল্লেখ করেছেন। তবে, তিনি সতর্ক করে বলেন যে, ইসরায়েল প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নিতে পারে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেবেন এবং তিনি ইতোমধ্যে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে তার মেয়াদকালে কোনো ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হবে না।
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের অন্তর্বর্তীকালীন নির্বাহী পরিচালক ফেদেরিকো বোরেলো বলেন, “বহুপক্ষীয় ব্যবস্থা এখন অস্তিত্ব সংকটে।” তিনি আরও বলেন, শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো যখন আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে, তখন আন্তর্জাতিক নিয়মকানুন দুর্বল হয়ে পড়ে, যা গাজা ও ইউক্রেনের মতো পরিস্থিতিতে দেখা যাচ্ছে।
ইতিমধ্যে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, “মানুষ এখন জবাব ও পদক্ষেপ চাইছে।” তিনি গাজা, ইউক্রেন, সুদান এবং জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
নতুন মুখের আগমন
প্রায় ১৪০ জন বিশ্বনেতার এই সমাবেশে নতুন মুখ হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা। প্রায় এক বছর আগে তার বিদ্রোহী বাহিনী সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল। দীর্ঘ গৃহযুদ্ধ শেষে দেশ পুনর্গঠনের কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছেন তিনি। এবারের অধিবেশনে, আল-শারার দিকে সবার বিশেষ নজর থাকবে।