‘ঢাকায় আসার মূল্য যেন জীবন দিয়ে দিতে হলো’, স্বজনদের আহাজারি

নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা
প্রতিদিনের মতো নারায়ণগঞ্জ থেকে রাজধানীতে অফিসে এসেছিলেন আবুল কালাম আজাদ। কিন্তু ঢাকায় আসার মূল্য যে তাঁকে জীবন দিয়ে দিতে হবে, তা হয়তো কেউ কল্পনাও করেনি। গতকাল রোববার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের পিলারের বিয়ারিং প্যাড খুলে তাঁর ওপর পড়ে। এতে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি।
নিহত আবুল কালাম আজাদ (৩৮) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে মতিঝিলের একটি ট্রাভেলস এজেন্সিতে চাকরি করতেন। তিনি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ঈশ্বরকাঠি গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন।
পরিবারের করুণ অবস্থা
চার বোন ও ছয় ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন আবুল কালাম আজাদ। ছোটবেলাতেই বাবা-মাকে হারানোর পর ঢাকায় বড় হন তিনি। স্ত্রী আইরিন আক্তার এবং তাঁদের ছয় বছরের ছেলে ও চার বছর বয়সী মেয়ে রয়েছে। তাঁরা নারায়ণগঞ্জের পাঠানটুলী এলাকায় বসবাস করতেন। সংসারের স্বাচ্ছন্দ্য ফেরাতে ২০১২ সালে তিনি মালয়েশিয়ায়ও গিয়েছিলেন।
নিহত আবুল কালাম আজাদের বড় বোন সেলিনা বেগম আহাজারি করতে করতে বলেন, “ছোট থেকে কষ্ট করে বড় হয়েছে আমার ভাই। সেই পরিবারটা সামলাচ্ছিল। ঢাকায় গেলে এমন মৃত্যু হবে—আমরা কিভাবে মানব? তার দুই সন্তানকে এখন কে দেখবে?”
আবু কালাম আজাদের এমন অকালমৃত্যুতে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ঈশ্বরকাঠি গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাঁর ভাবি আছমা বেগম বলেন, “বেলা ১২টার দিকে আবুল কালামের সঙ্গে আমার কথা হয়। দুই-এক দিনের মধ্যে বাড়িতে আসবে বলেছিল। ইলিশ মাছ কিনে রাখতে বলেছিল। ভাই আর আসল না।”
নিরাপত্তা বিপর্যয় ও প্রশাসনের সহায়তা
নিহতের চাচাতো ভাই আব্দুল গনি মিয়া চোকদারের ভাষ্য, “আধুনিক এই প্রকল্পে যদি এমন নিরাপত্তা বিপর্যয় হয়, তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় নিরাপদ? দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।”
এ বিষয়ে নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আব্দুল কাইয়ুম খান জানিয়েছেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিবারটিকে সহযোগিতা করা হচ্ছে এবং সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
