
হুন্ডি।
নুরুল আমিন, ঢাকা।
আমদানি-রপ্তানি, মুঠোফোনে আর্থিক সেবা (এমএফএস) ও মুঠোফোন মেরামত—এমন সব ব্যবসার আড়ালে অবৈধ চ্যানেলে আর্থিক লেনদেনে (হুন্ডি) জড়িত মালয়েশিয়ার নাগরিক দুই ভাই। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) এক প্রতিবেদনে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।
ওই দুই ভাই হলেন সিরাজউদ্দিন বিন বদরুদ্দিন ও মোহসিন বিন বদরুদ্দিন।
বিএফআইইউর প্রধান অভিযোগ
- ব্যবসার আড়াল: মালয়েশিয়াতে থাকা বাংলাদেশি প্রবাসীদের বেতনের অর্থ সংগ্রহ করে সেই অর্থ এমএফএসের মাধ্যমে প্রবাসীদের দেশে থাকা পরিবার ও স্বজনদের কাছে পৌঁছে দিতেন তাঁরা।
- লেনদেনের পরিমাণ: দুই ভাইয়ের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নামে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা ৪৩টি হিসাবে ২০১২ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ২১ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা লেনদেন (জমা ও উত্তোলন) হয়েছে।
- প্রতিষ্ঠান: তাঁদের নামে বাংলাদেশে জেন ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, এম এম সার্ভিস, সেলিগ্রা সার্ভিস লিমিটেড, কমপিউগেটস ইন্টারন্যাশনালসহ সাতটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।
হুন্ডি পরিচালনার পদ্ধতি
মালয়েশীয় আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা এফআইইউর বরাত দিয়ে বিএফআইইউর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে:
১. প্রবাসী বাংলাদেশিদের উপার্জনের অর্থ মালয়েশিয়ায় সিরাজউদ্দিনের ব্যাংক হিসাবে জমা হয়।
২. জমার কারণ হিসেবে ‘অনুদান’ ও ‘উপহার’ ঘোষণা করা হয়।
৩. পরে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে প্রবাসীদের আত্মীয়স্বজনদের এমএফএসের মাধ্যমে টাকা দেওয়া হয়।
৪. জেন ইন্টারন্যাশনালের অধীনে থাকা ১১৮টি এজেন্ট হুন্ডি ব্যবসায় জড়িত। এই এজেন্টগুলো থেকে দিবাগত রাত ১২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত প্রতি মিনিটে তিনবারের বেশি ১৫ হাজার বা তার বেশি অঙ্কের টাকা লেনদেন হয়েছে।
তদন্তের অবস্থা
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) সূত্রে জানা যায়, বিএফআইইউর প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ২০২৩ সালে তারা বিষয়টি অনুসন্ধান করেছিল, তবে তখন মামলা হয়নি। সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার লুৎফুল কবির জানিয়েছেন, মালয়েশিয়ার নাগরিক দুই ভাইয়ের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচারের অনুসন্ধান চলছে এবং এ বিষয়ে এখন আবার অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এদিকে, জেন ইন্টারন্যাশনালের ডিজিএম লে. কমান্ডার (অব.) সাঈদ এম কাসেদ হুন্ডির সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
