গাজীপুর থেকে টাঙ্গাইল যাওয়ার পথে মাইক্রোবাসে অপহরণ, মুক্তিপণের পর মুক্তি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
গাজীপুর থেকে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল যাওয়ার পথে অপহরণের শিকার হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী এস এম আল জুবায়ের। বুধবার (২২ অক্টোবর) রাত ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ গ্রুপে এক ভিডিও বার্তায় তিনি অপহরণের ঘটনা ও নির্যাতনের বর্ণনা দেন।
গত ২০ অক্টোবর এই ঘটনা ঘটে। জুবায়ের উদ্ভাস কোচিংয়ে ক্লাস নিতে যাচ্ছিলেন।
অপহরণ ও নির্যাতনের বর্ণনা
জুবায়েরের ভাষ্যমতে, তিনি গাজীপুর বাইপাসের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় এক মাঝবয়সী লোক তাঁর সঙ্গে আলাপ করতে থাকে। একপর্যায়ে তিনি একটি গন্ধ পাওয়ার পর মাথা কাজ করা বন্ধ করে দেয়। এরপর লোকটি একটি মাইক্রোবাসে উঠলে তাঁকে ডেকে টাঙ্গাইল যাওয়ার কথা বলে গাড়িতে উঠতে বলেন।
মাইক্রোবাসে ওঠার কিছুক্ষণ পর তাঁর আর কোনো সেন্স কাজ করেনি। তিনি বলেন, “কিছুক্ষণ পর তারা আমার হাত, পা ও চোখ বেঁধে ফেলে এবং চড় থাপ্পড় মারতে থাকে। তারপর আমার মোবাইল, ম্যানিব্যাগ কেড়ে নেয়।”
অপহরণকারীরা একে একে তাঁর নগদ, বিকাশ ও এটিএম কার্ডের পিন জানতে চায় এবং বিকাশ ও নগদের প্রায় ৭ হাজার ৪০০ টাকা নিজেদের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে নেয়। তাঁর ব্যাগে থাকা সাত-আট হাজার টাকাও তারা নিয়ে নেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয় জানার পর নির্যাতন
জুবায়ের জানান, অপহরণকারীরা তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জানতে পেরে আরও বেশি নির্যাতন শুরু করে। তারা বলে, “তোরা আন্দোলন করে আমাদের নেত্রীকে দেশ থেকে বের করে দিয়েছিস এবং তোদের জন্য আজকে দেশের এই অবস্থা, তোদের আন্দোলন তোদের *** দিব”। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে একপর্যায়ে তিনি এটিএম কার্ডের পাসওয়ার্ড বলতে বাধ্য হন। সেই অ্যাকাউন্টে থাকা এক লাখ চৌদ্দ হাজার টাকাও তারা ট্রান্সফারের চেষ্টা করে।
মুক্তিপণ ও মুক্তি
অপহরণকারীরা তাঁর বাবাকে ফোন দিয়ে জানায়, “আপনার ছেলে আমাদের পাঁচ-ছয় লাখ টাকা ক্ষতি করেছে, আপনি আমাদের এক লাখ টাকা দিলে ছেড়ে দিব।” বাবার আপত্তিতে একপর্যায়ে পাঁচ হাজার টাকা দিতে রাজি হন।
পরে অপহরণকারীরা জুবায়েরকে ত্রিশ হাজার টাকা এনে দিতে বলে। তিনি তাঁর কাকাকে ফোন দিলে টাকা পাঠানোর পর প্রায় দেড় ঘণ্টা আটকে রেখে তাঁকে গাজীপুর চন্দ্রার থেকে সাভার আসার একটি ইউটার্নে হাত, মুখ ও চোখ বাঁধা অবস্থায় ফেলে দেয়।
চিকিৎসা ও নিরাপত্তাহীনতা
বিভিন্ন লোকের সহায়তায় ঢাকায় ফিরে আসার পর বন্ধুরা তাঁকে ইবনে সিনা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা করান। তাঁর শরীরে ও হাতে-পায়ে আঘাতের কারণে হাতের আঙ্গুল ভেঙে যায়।
জুবায়ের উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, তিনি একজন শিক্ষার্থী হিসেবে যেখানে নিরাপদ নন, সেখানে সাধারণ মানুষের কী অবস্থা? তিনি ক্ষোভের সঙ্গে জানান, হল প্রশাসন, হল সংসদ বা ডাকসুর কোনো প্রতিনিধি এখনো তাঁর সঙ্গে দেখা করেননি।