৯০ দেশের প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে বুটেক্সের চার শিক্ষার্থীর পরিবেশবান্ধব উদ্ভাবন

আলভী আহমেদ
বুটেক্স প্রতিনিধি
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো কচুরিপানা ও পুনর্ব্যবহৃত ডেনিম ব্যবহার করে পরিবেশবান্ধব জুতা তৈরি করেছেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট বিভাগের একদল শিক্ষার্থী। তাঁদের উদ্ভাবিত ‘ইকো স্টেপ’ প্রকল্পটি সম্প্রতি ‘রাউন্ডটেবিল গ্লোবাল ইউথ অ্যাওয়ার্ডস–২০২৫’-এর এনভায়রনমেন্ট ইনোভেশন ক্যাটাগরিতে ফাইনালিস্ট হিসেবে মনোনীত হয়েছে।
বাংলাদেশের গ্রামীণ অঞ্চলে পরিবেশের উপদ্রব হিসেবে পরিচিত কচুরিপানা এবং বিপুল পরিমাণ পানি ব্যবহারকারী ডেনিমের বর্জ্য—এই দুটি সমস্যা সমাধানের প্রয়াসে বুটেক্সের চার শিক্ষার্থী অন্বয় দেবনাথ, অর্ণব হালদার, ফারদীন বিন মনির ও তাশফিক হোসাইন পরীক্ষামূলকভাবে এই পরিবেশবান্ধব জুতা তৈরি করেন।
উদ্ভাবন ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
শিক্ষার্থীরা কচুরিপানা ব্যবহার করে জুতার ইনসোল (ভেতরের সোল) ও আউটার সোল তৈরি করেছেন এবং পুনর্ব্যবহৃত ডেনিম ব্যবহার করে জুতার বাইরের আবরণ তৈরি করেছেন। প্রকল্পটির তত্ত্বাবধানে ছিলেন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মারজিয়া দুলাল।
‘রাউন্ডটেবিল গ্লোবাল ইউথ অ্যাওয়ার্ডস–২০২৫’ এর এবারের আসরে ৯০টিরও বেশি দেশ থেকে প্রায় ৪০০ জন প্রতিযোগী অংশ নিয়েছেন। সেখান থেকে ‘ইকো স্টেপ’ সেরা তিনের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। আগামী ৮ নভেম্বর যুক্তরাজ্যের লন্ডনে কিংস্টন ভেন্যুতে ফাইনাল পর্ব অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে। তবে ব্যয়বহুল হওয়ায় শিক্ষার্থীরা অনলাইনে অনুষ্ঠানে যুক্ত হবেন।
শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া
ফাইনালে উঠতে পেরে অন্বয় দেবনাথ বলেন, “এত বড় আন্তর্জাতিক পুরস্কারের ফাইনালে উঠব, সেটা কল্পনাতেও ছিল না। বুটেক্স থেকে আন্তর্জাতিক মানের উদ্ভাবন উপস্থাপন করতে পারা আমাদের জন্য গর্বের।”
ফারদীন বিন মনির আশা প্রকাশ করেন, এই প্রজেক্টটিকে ভবিষ্যতে আরও গবেষণার মাধ্যমে বাণিজ্যিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হবে।
প্রকল্পটির তত্ত্বাবধায়ক ড. মারজিয়া দুলাল বলেন, “ফাইনালে ওঠাটাই বুটেক্সের জন্য বড় অর্জন। এটি প্রমাণ করে, আমাদের শিক্ষার্থীরা দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে বিশ্বমানে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম।” বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো. মাসুম এই উদ্ভাবনকে “বৃত্তাকার অর্থনীতির যুগে যুগান্তকারী উদ্যোগ” হিসেবে অভিহিত করে গবেষণাগার স্থাপনের আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, এই পুরস্কারটি ১১ থেকে ২৫ বছর বয়সী সেই সব তরুণদের সম্মান জানায়, যারা বিশ্বজুড়ে সামাজিক ও পরিবেশগত পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।