বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯: ১৫

মহেশ ভাট ও তাঁর মেয়ে পূজা ভাটএক্স থেকে
সমকালীন বাণিজ্যিক সিনেমার প্রসঙ্গ এলে একজন নির্মাতার নাম চলে আসে। তিনি পরিচালক, প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার—সব ভূমিকাতেই সমান সফল। আবার সমান বিতর্কিতও। তিনি মহেশ ভাট। আজ, ২০ সেপ্টেম্বর, তার জন্মদিন। বয়সের ক্যালেন্ডার বলছে ৭৭, কিন্তু আলোচনার কেন্দ্রে থাকার ক্ষমতা যেন এখনো তীক্ষ্ণ ও সক্রিয়। চলচ্চিত্রানুরাগীরা এক নামেই তাকে চেনেন। তার দীর্ঘ কর্মজীবনের পাশে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে শিল্প আর বিতর্ক। যেমনটি আলোচনায় উঠে আসে একটি পুরোনো ছবি, যেখানে দেখা যায় কন্যা পূজা ভাটকে ঠোঁটে চুম্বন করছেন মহেশ ভাট। সেই ছবি ঘিরে তিন দশকের বেশি সময় ধরে চলা বিতর্ক আজও যেন থেমে নেই। জন্মদিনে তাই আবার সামনে চলে এসেছে সেই ঘটনাই।
১৯৯০ সালের সেই প্রচ্ছদ ও বিতর্ক
ঘটনাটা ঘটেছিল নব্বইয়ের দশকের শুরুতে। ভারতের একটি জনপ্রিয় ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে প্রকাশিত হয় মহেশ ভাট ও তার মেয়ে পূজা ভাটের ছবি। তাতে দেখা যায়, কিশোরী পূজা বাবার কোলে বসে আছেন, আর মহেশ ভাট মেয়েকে ঠোঁটে চুম্বন করছেন। বাবা মেয়ের ছবি হলেও, ছবিটি প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় প্রবল সমালোচনা। অনেকে বিষয়টিকে কেবল পিতা-কন্যার স্নেহময় মুহূর্ত হিসেবে দেখেননি, বরং সেটিকে অগ্রহণযোগ্য, অস্বাভাবিক সম্পর্কের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করেন।
ভারতের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এই ছবি তৎকালীন সময়ে চরম বিতর্ক উসকে দেয়। সংবাদপত্র, চিঠিপত্র, টেলিভিশন অনুষ্ঠান—সব জায়গাতেই সমালোচনার ঝড় ওঠে। এমনকি আজ পর্যন্ত এটা নিয়ে কথা হয়। কিন্তু পূজা ভাট বছরের পর বছর ধরে একই অবস্থানেই থেকেছেন। তিনি বারবার বলেছেন, এটি ছিল একটি ‘নির্দোষ মুহূর্ত’, যা ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

মহেশ ভাট
এক্স থেকে
পূজা ভাটের স্পষ্ট ব্যাখ্যা
কিছুদিন আগে এক ভিডিও সাক্ষাৎকারে পূজা বলেছেন, এ নিয়ে মোটেও বিচলিত নন তিনি। এটা নিয়ে অনুশোচনার প্রশ্নই আসে না। তার ভাষায়, “এটি আমার কাছে একেবারেই সাধারণ এক মুহূর্ত ছিল। কিন্তু মানুষ যেভাবে চাইবে, সেভাবেই এটিকে উপস্থাপন করবে। শাহরুখ খান একবার আমাকে বলেছিলেন, যখন তোমার মেয়ে হবে, তখন সেও তোমাকে বলবে, ‘মা, আমার গালেও একটা চুমু দাও।’ আমি আজও বাবার কাছে দশ বছরের একটি ছোট মেয়ে।”
ক্ষোভের সঙ্গে তিনি আরও বলেন, “যদি কেউ বাবা-মেয়ের সম্পর্ককে অন্যভাবে দেখতে চায়, তবে তারা যেকোনোভাবে তা ব্যাখ্যা করবে। আমি তা থামাতে পারব না। অথচ আমাদের সমাজে সবাই পারিবারিক মূল্যবোধের কথা বলে, কিন্তু স্নেহের মুহূর্তকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করতে কুণ্ঠিত হয় না।” এই ছবি নিয়ে বাবা-মেয়ে দুজনই জানিয়েছেন, শুধু ক্যামেরার অ্যাঙ্গেলের জন্য বিষয়টা অন্যভাবে দেখার বা ভুল বোঝার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এটি একটি নিরেট পিতা-কন্যার স্নেহ-ভালোবাসা মাখা ছবি।

প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার আগেই মহেশ ভাট দ্বিতীয় বিয়ে করে রীতিমতো সাড়া ফেলে দেন বলিউড পাড়ায়
কোলাজ
জন্ম ও বেড়ে ওঠা
ফিরে যাই শুরুতে। মহেশ ভাটের জীবনযাত্রা শুরু কিন্তু পাকিস্তানে। ১৯৪৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর লাহোরে জন্ম মহেশ ভাটের । তাঁর বাবা নানাভাই ভাট ছিলেন ব্রাহ্মণ আর মা শিরিন মোহাম্মদ আলী ছিলেন গুজরাটের মুসলিম পরিবারের সন্তান। অবশ্য মহেশ ভাটের পরিচয় নিয়েও কম কথা হয়নি। এমনকি বলিউড তারকা কঙ্গনা রনৌতও এ নিয়ে সরাসরি মন্তব্য করেছেন।
ক্ষোভের সঙ্গে তিনি আরও বলেন, “যদি কেউ বাবা-মেয়ের সম্পর্ককে অন্যভাবে দেখতে চায়, তবে তারা যেকোনোভাবে তা ব্যাখ্যা করবে। আমি তা থামাতে পারব না। অথচ আমাদের সমাজে সবাই পারিবারিক মূল্যবোধের কথা বলে, কিন্তু স্নেহের মুহূর্তকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করতে কুণ্ঠিত হয় না।” এই ছবি নিয়ে বাবা-মেয়ে দুজনই জানিয়েছেন, শুধু ক্যামেরার অ্যাঙ্গেলের জন্য বিষয়টা অন্যভাবে দেখার বা ভুল বোঝার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এটি একটি নিরেট পিতা-কন্যার স্নেহ-ভালোবাসা মাখা ছবি।
কঙ্গনার বিতর্কিত মন্তব্য ও মহেশ ভাটের কর্মজীবন
২০২২ সালে কঙ্গনা রানাউত তার ইনস্টাগ্রামে একটি স্টোরি শেয়ার করে জানান যে মহেশ ভাটের আসল নাম মহেশ নয়, বরং আসলাম। তিনি অভিযোগ করেন যে মহেশ সোনিয়া রাজদানকে বিয়ে করার জন্য ধর্মান্তরিত হয়েছেন। এই মন্তব্যের মাধ্যমে কঙ্গনা পুরনো বিতর্ক উসকে দেন।

মহেশ ভাটের প্রযোজনায় ‘গ্যাংস্টার’ ছবি দিয়েই বলিউডে পা রাখেন কঙ্গনা
ফেসবুক থেকে
পরিচালক হিসেবে মহেশ ভাট মাত্র ২৬ বছর বয়সে প্রথম চলচ্চিত্র ‘মঞ্জিলে অউর ভি হ্যাঁয়’ পরিচালনা করেন। যদিও ছবিটি তেমন বাণিজ্যিক সাফল্য না পেলেও তার পরিচিতি তৈরি হয়। এরপর ১৯৭৯ সালের ‘লহু কে দো রং’ ছবিটি তাকে এক ধাক্কায় বলিউডে প্রতিষ্ঠিত করে। তার পরিচালিত অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘আর্থ’ (১৯৮২), যা তাকে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার এনে দেয়, এবং ‘সারাংশ’ (১৯৮৪), যা অস্কারে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করে।
গম্ভীর ও শিল্পধর্মী চলচ্চিত্র নির্মাণের পাশাপাশি তিনি বাণিজ্যিক ধারার ছবিতেও সাফল্য পান। ১৯৮৬ সালে মুক্তি পায় ‘নাম’, যা তাকে নতুন দর্শকগোষ্ঠী এনে দেয়। নব্বইয়ের দশকে তিনি নির্মাণ করেন ‘সার’, ‘গুমরাহ’ ও ‘ক্রিমিনাল’। এই সব কটি ছবিই ছিল বাণিজ্যিকভাবে সফল। ১৯৯৯ সালে নির্মিত তার আত্মজীবনীমূলক ছবি ‘জখম’ জাতীয় পুরস্কার জয় করে।

মেয়ের সঙ্গে মহেশ
ফেসবুক থেকে
প্রযোজক হিসেবেও তিনি ভাই মুকেশ ভাটকে সঙ্গে নিয়ে বিশেষ ফিল্মস প্রতিষ্ঠা করেন। এই প্রযোজনা সংস্থা থেকে ‘জিসম’ (২০০৩) ও ‘মার্ডার’ (২০০৪)-এর মতো হিট ছবি তৈরি হয়।
মহেশ ভাটের চলচ্চিত্র যেমন সাহসী, তেমনি তার ব্যক্তিত্বও স্পষ্টভাষী। তিনি কখনোই মুখ লুকিয়ে কথা বলেননি। ধর্ম, রাজনীতি, সামাজিক বৈষম্য—সব বিষয়ে তিনি খোলামেলা অবস্থান নিয়েছেন। আর এ কারণেই তার নামের সঙ্গে বিতর্ক জড়িয়ে গেছে বারবার। তার শিল্পকর্ম বারবার মনে করিয়ে দেয় যে মানুষকে একরৈখিকভাবে বোঝা যায় না। বাণিজ্যিক ধারার বলিউডি সিনেমায় তার নামটা টিকে থাকবে বহু বছর।
https://indianexpress.com/section/entertainment/bollywood/