
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা।
গত বছর জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমা প্রার্থনা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। বুধবার আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স, এএফপি এবং যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ইনডিপেনডেন্ট—এই তিনটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তাঁর ই-মেইলভিত্তিক সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে।
পলাতক জীবনে দেওয়া এই প্রথম সাক্ষাৎকারগুলোতে শেখ হাসিনা হত্যাকাণ্ড, নিজের বিচার, নির্বাচন এবং রাজনৈতিক উত্তরাধিকার নিয়ে লিখিত প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন।
হত্যায় দায় অস্বীকার ও ক্ষমা না চাওয়ার অবস্থান
সাক্ষাৎকারগুলোতে শেখ হাসিনা একই ভাষায় কথা বলেছেন এবং কোনো কিছুর জন্য অনুশোচনা বা ব্যক্তিগত দায় স্বীকার করেননি।
হত্যায় দায় অস্বীকার ও ক্ষমা না চাওয়ার অবস্থান
সাক্ষাৎকারগুলোতে শেখ হাসিনা একই ভাষায় কথা বলেছেন এবং কোনো কিছুর জন্য অনুশোচনা বা ব্যক্তিগত দায় স্বীকার করেননি।
- ক্ষমা প্রার্থনা: আন্দোলনকারীদের পরিবারের কাছে ক্ষমা চাইবেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমি আমাদের জাতি হিসেবে হারানো প্রতিটি সন্তান, ভাই-বোন, আত্মীয় ও বন্ধুর জন্য শোক প্রকাশ করি এবং তা করতে থাকব।” (দ্য ইনডিপেনডেন্ট)
- দায়ভার: ছাত্র-জনতার হত্যার জন্য তিনি ‘মাঠপর্যায়ে থাকা নিরাপত্তা বাহিনীর শৃঙ্খলা ভেঙে পড়া’কে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, “একজন নেতা হিসেবে আমি অবশ্যই সামগ্রিক দায় স্বীকার করি, কিন্তু আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে—যে আমি নিজে নিরাপত্তা বাহিনীকে জনতার ওপর গুলি চালাতে বলেছিলাম, এটা ঠিক নয়।”
- আন্দোলন: তিনি গত বছরের বিক্ষোভ দমনের সময়কার কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করেন এবং গণ–অভ্যুত্থানকে একটি ‘সহিংস বিদ্রোহ’ দাবি করে এর দমনকে সাংবিধানিক অধিকার বলে বর্ণনা করেছেন।
- বিচার ও মৃত্যুর সংখ্যা: ট্রাইব্যুনালে তাঁর বিচার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, যদি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, তাতে তিনি অবাক হবেন না বা ভয়ও পাবেন না। তিনি ১ হাজার ৪০০ মৃত্যুর সংখ্যাটি ‘অতিরঞ্জিত’ দাবি করে এটিকে ‘প্রহসনের বিচার’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যার পেছনে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা কাজ করছে।

শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে ইনডিপেনডেন্টে প্রকাশিত প্রতিবেদনের একাংশের স্ক্রিনশট
নির্বাচন, দেশে ফেরা ও উত্তরাধিকার
- নির্বাচন: শেখ হাসিনা বলেছেন, শুধু ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনই’ দেশকে ঠিক করতে পারে। তিনি সতর্ক করে দেন যে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশ নিতে না দিলে তাদের লাখ লাখ সমর্থক ভোট বর্জন করবে এবং দেশে বিভেদ বাড়বে।
- দেশে ফেরা: রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, কোনো সরকার যদি এমন নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত হয়, যেখানে তাঁর দল থাকবে না, তবে তিনি সেই সরকারের অধীনে বাংলাদেশে ফিরবেন না এবং ভারতেই থাকার পরিকল্পনা করেছেন।
- উত্তরাধিকার: তিনি মনে করেন না যে আওয়ামী লীগ পরিচালনার জন্য তাঁর পরিবারের দরকার। তাঁর ভাষায়, “বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে সংবিধান ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পুনঃপ্রতিষ্ঠার ওপর। কোনো ব্যক্তি বা পরিবার দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে না।”
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মন্তব্য
দ্য ইনডিপেনডেন্ট মন্তব্য করেছে যে গত বছর বিক্ষোভকারীদের ওপর দমন-পীড়ন বিশ্বকে শোকার্ত করেছিল। জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধানী দলের প্রতিবেদনেও বলা হয়, গত বছর ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বিক্ষোভ চলাকালে ১ হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হয়ে থাকতে পারেন এবং এসব হতাহতের বেশির ভাগ হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে।
গুমের বিষয়ে নীরবতা: রয়টার্স সবশেষে উল্লেখ করেছে, নিজের শাসনামলে গোপন বন্দিশালায় নিখোঁজ হওয়া শত শত মানুষের ভাগ্য সম্পর্কে শেখ হাসিনা সাক্ষাৎকারে কিছুই বলেননি।
