নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আপডেট:২৫ আগস্ট ২০২৫, ১২:১৮
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিক প্রচার আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হবে। প্রার্থীরা ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত প্রচার চালাতে পারবেন। তবে ছাত্রীদের হলগুলোতে প্রচার চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত।
প্রচার কৌশল ও প্রার্থীদের ভাবনা
প্রচারণার কৌশল নিয়ে গতকাল সোমবার বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরা তাঁদের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। মূলত চারটি প্রধান উপায়ে তাঁরা ভোটারদের কাছে পৌঁছাতে চান—অনলাইন বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, পোস্টার ও লিফলেট, ব্যানার এবং সরাসরি হল ও একাডেমিক ভবনের সামনে সশরীরে প্রচারণা।
আজ সকালে ডাকসু নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে প্রার্থীদের বৈঠকের পর জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল তাদের প্রচারণা শুরু করবে। প্যানেলের এজিএস প্রার্থী তানভীর আল হাদী মায়েদ বলেন, বৈঠকের পর তাঁরা ক্যাম্পাস ও হলগুলোতে প্রচার শুরু করবেন।
একই সময়ে প্রচারণা শুরু করবে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ-সমর্থিত প্যানেল বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ। তাদের জিএস প্রার্থী আবু বাকের মজুমদার বলেন, তাঁরা আচরণবিধি লঙ্ঘন না করে প্রচার চালাবেন।
স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের ভিপি প্রার্থী উমামা ফাতেমা জানান, তাঁরা উদ্ভাবনী কোনো পদ্ধতিতে প্রচার শুরু করবেন। অন্যদিকে, সাতটি বাম ছাত্রসংগঠনের উদ্যোগে গঠিত প্রতিরোধ পর্ষদ প্যানেলের এজিএস প্রার্থী জাবির আহমেদ জুবেল বলেন, তাঁরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু করবেন।
আচরণবিধির গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা
নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী, প্রার্থীরা কেবল সাদাকালো পোস্টার, লিফলেট বা হ্যান্ডবিল ব্যবহার করতে পারবেন, যেখানে প্রার্থীর সাদাকালো ছবি ছাড়া অন্য কোনো ছবি বা প্রতীক ব্যবহার করা যাবে না।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে:
- বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, হল, স্থাপনা, দেয়াল, গাছপালা বা খুঁটিতে কোনো ধরনের পোস্টার লাগানো যাবে না।
- দেয়াল বা যানবাহনে কালি, চুন বা কেমিক্যাল ব্যবহার করে কোনো লিখন বা চিত্রাঙ্কন করা যাবে না।
- প্রার্থীরা কোনো ফটক, তোরণ, ঘের বা আলোকসজ্জা করতে পারবেন না, তবে অস্থায়ী প্যান্ডেল, শামিয়ানা ও মঞ্চ স্থাপন করা যাবে।
- কোনো ধর্মীয় উপাসনালয়, শ্রেণিকক্ষ, বা পরীক্ষার হলের মতো জায়গায় প্রচারণা চালানো যাবে না।
- কোনো প্রার্থী ভোটারদের উপঢৌকন বা বকশিস দিতে পারবেন না।
- সভা-সমাবেশ করতে চাইলে ২৪ ঘণ্টা আগে অনুমতি নিতে হবে।
- নির্বাচনী প্রচার বা ভোটের দিন কোনো পানীয় বা খাদ্য পরিবেশন করা যাবে না।
আচরণবিধি ভঙ্গ করলে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা জরিমানা, প্রার্থিতা বাতিল বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারসহ আইন অনুযায়ী যেকোনো দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।
প্রার্থী ও ভোটার তালিকা আপডেট
গতকাল ছিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন, যেখানে ২১ জন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। আপিলের পর ৩৪ জন প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে, ডাকসুর ট্রাইব্যুনাল কমিটি জুলিয়াস সিজার তালুকদার ও বায়েজিদ বোস্তামী নামের দুই শিক্ষার্থীকে ভোটার ও প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে এই সুপারিশ করা হয়েছে এবং এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সিন্ডিকেটে পাঠানো হয়েছে।
অন্যদিকে, ডাকসুর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা অনলাইনে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকলেও শিক্ষার্থীদের অনুরোধে তা বর্তমানে বন্ধ করা হয়েছে। যেসব ভোটার ছবি প্রদর্শন করতে চান না, তাদের বুধবারের মধ্যে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করতে বলা হয়েছে।
নির্বাচনী নিরাপত্তা প্রস্তুতি
নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্যাম্পাস ও ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে একটি উচ্চপর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপাচার্যের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় ক্যাম্পাসের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা, ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং শিক্ষার্থীদের নির্বিঘ্নে ভোট দেওয়া ও সুষ্ঠু ভোট গণনার বিষয়ে বিভিন্ন কর্মকৌশল ও পরিকল্পনা নেওয়া হয়।