দেশের গড় পাসের হার ৬০% থেকে নেমে ৫৮.৮৩%, বিশেষজ্ঞরা দায়ী করছেন মোবাইল আসক্তিকে

মো. মাসুদ মিয়া
কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে ঘরকুনো হওয়া এবং উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েদের হাতে মোবাইল ফোন তুলে দেওয়া—এই দুটি প্রবণতা দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় বড় ধরনের বিপর্যয় নিয়ে এসেছে। অনলাইন ক্লাসের মহৎ উদ্দেশ্য অপব্যবহারে পরিণত হওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীরা বই ছেড়ে মোবাইলে আসক্ত হয়েছে। সেই দুর্বলতা এবার প্রকাশিত হলো এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে।
ফলাফল বিপর্যয়ের চিত্র
গত ১৬ অক্টোবর ২০২৫ সালে প্রকাশিত এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল অনুসারে, সারা দেশে গড় পাসের হার দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫৮.৮৩ শতাংশ। উচ্চ মাধ্যমিক বা এইচএসসি পরীক্ষায় গত ২০ বছর ধরে যেখানে গড় পাসের হার ৬০ শতাংশের ওপরে ছিল, সেখানে এবারের ফলকে অনেকে বিপর্যয় বলে মনে করছেন।
- অকৃতকার্য: পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ১২ লাখ ৩৫ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪১.১৭ শতাংশ (যা পাঁচ লাখের বেশি) শিক্ষার্থী ফেল করেছে।
- বোর্ডভিত্তিক পাসের হার: ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার সবচেয়ে বেশি (৬৪.৬২%), আর কুমিল্লা বোর্ডে সবচেয়ে কম (৪৮.৮৬%)।
- ময়মনসিংহ বোর্ডে: ময়মনসিংহ শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ৫১.৫৪ শতাংশ। এখানে ছাত্রীদের পাসের হার (৫৫.৭০%) ছাত্রদের (৪৬.৮৩%) চেয়ে বেশি।
বিশেষজ্ঞদের মতে বিপর্যয়ের কারণ
শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞরা এই বিপুল সংখ্যক পরীক্ষার্থী অকৃতকার্য হওয়ার পেছনে একাধিক কারণ উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে: বারবার শিক্ষাপদ্ধতির পরিবর্তন, রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা, দক্ষ শিক্ষকের ঘাটতি, এবং খাতা দেখার ক্ষেত্রে বাড়তি কড়াকড়ি।
- মোবাইল আসক্তি: মাগুরার বনশ্রী রবীন্দ্র স্মরণী কলেজের শিক্ষক আশিষ কুমার বিশ্বাস মনে করেন, মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহার এবং এআই-নির্ভর সংক্ষিপ্ত বা টোটকা লেখাপড়ার সুযোগ শিক্ষার্থীদের মনোযোগে ঘাটতি তৈরি করেছে, যা ফেল করার অন্যতম কারণ।
- শর্টকাটে পাসের প্রবণতা: জানার জন্য নয়, শুধু সাংখ্যিক জিপিএ ৫.০ এবং শর্টকাটে পাস করার প্রবণতাও এই ফলের জন্য দায়ী।
আফসোস এড়াতে সচেতনতার বার্তা
লেখকের মতে, যারা পড়াশোনা বাদ দিয়ে সারাক্ষণ মোবাইল নিয়ে পড়েছিল, ভিডিও বানানো বা ভ্লগ করা নিয়ে ব্যস্ত ছিল, তারাই এখন হা-হুতাশ করছে। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সফল হতে হলে লেখাপড়া করতেই হবে, কারণ দিনশেষে জ্ঞানই সবচেয়ে বেশি জরুরি।
অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রযুক্তিকে দোষ না দিয়ে এর ব্যবহার পদ্ধতি ঠিক করতে হবে। মোবাইলকে সন্তানের বন্ধু নয়, সহায়ক উপকরণ হিসেবে ব্যবহার শেখাতে হবে। অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে এবং সন্তানদের হাতে বই তুলে দিতে হবে, নইলে ভবিষ্যতে আফসোস হবে।
